স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট:
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট কিংবা (Shopnopuri Artificial Amusement Park) পার্কটি হচ্ছে আমাদের দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে অবস্থিত প্রায় ৪০০ (চারশো) একর জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে। আর সড়কপথে দিনাজপুর জেলা সদর হতে স্বপ্নপুরী দূরত্ব প্রায় ৫২ {বাহান্ন} কিলোমিটার। পুরো বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি পরিমাণ দর্শনার্থী চিত্তবিনোদনের জন্য স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে আসেন। তাছাড়া এখানে অনেক চলচিত্র তৈরি হওয়ায় এই স্বপ্নপুরী অনেক সহজেই মানুষের আকষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্বপ্ন নয় তবুও স্বপ্নের মতো হচ্ছে আমাদের এই স্বপ্নপুরী । স্বপ্নপুরী দেখতে অনেক সুন্দর ।বলা যায় যে এই স্বপ্নপুরী হচ্ছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিনোদনকেন্দ্র।
স্বপ্নপুরীর অবস্থান ও আয়তনঃ
এই স্বপ্নপুরী হচ্ছে আমাদের রংপুর বিভাগের মধ্যে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে অবস্থিত। যেটি উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৫{পনেরো} কি:মি: উত্তর দিকে ৯ নং কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদের অধীন খালিপপুর মৌজায় অবস্থিত । আর এটি দিনাজপুর জেলা শহর হতে সড়ক পথে প্রায় ৩৩ {তেত্রিশ} মাইল বা ৫২{বাহান্ন} কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে অবস্থিত । আর ফুলবাড়ি উপজেলা শহর হতে স্বপ্নপুরী এর দূরত্ব প্রায় ১২{বারো} কিলোমিটার। আর দিনাজপুর হতে ফুলবাড়ি আফতাবগঞ্জ হাট হতে সম্পূর্ণ পাকা রাস্তা দিয়ে এই স্বপ্নের মতো নির্মল নিরিবিলি এবং মায়াবী স্বপ্নময় ভুবন স্বপ্নপুরীতে পৌঁছনো যায়।
আর এই স্বপ্নপুরীর আয়তন প্রায় ১৫০ একর জমি ।
স্বপ্নপুরীর ইতিহাসঃ
এই নান্দনিক স্বপ্নপুরী তৈরি করেন কুশদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: দেলওয়ার হোসেন । তিনি ১৯৮৯ সালে স্বপ্নপুরীর কাজ শুরু করেন। বলা যায় যে তার শ্রম এবং অর্থের বিনিময়ে এই স্বপ্নপুরী তৈরি হয়ছে । আর বর্তমানে দিনাজপুর-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো: শিবলি সাদিক এম. পি' এর অধীনে এই পার্কটি চালু রয়ছে ।
স্বপ্নপুরীতে কি কি রয়ছেঃ
এই নান্দনিক স্বপ্নপুরীর প্রবেশমুখে রয়ছে প্রস্তরনির্মীত ধবধবে সাদা ডানাবিশিষ্ট দুটি সুবিশাল পরী। তাদের দেখলে মনে হয় যেন তারা মোহনীয় ভঙ্গীতে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। এখানে আছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পশু-পাখির অবিকল ভাষ্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝর্ণা ও ইট-সিমেন্টে দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের এক সুবিশাল মানচিত্র, একটি কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, আবার জীবন্ত পশুপাখীদের চিড়িয়াখানা, শিশুদের জন্য পার্ক, দোলনা, বায়োস্কোপ,ফুলবাগিচা,কৃত্রিম ঝর্ণা, ইটখলা, ঘোড়ার রথ,শালবাগান,কৃত্রিম পশুপাখি, বিভিন্ন প্রতিকৃতি, ফুলের বাগান, বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি ।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটে আসলে আপনি একে একে দেখতে পাবেন কৃত্রিম লেক, পাহাড়, উদ্যান, এবং, হংসরাজ সাম্পান, খেলামঞ্চ, নামাজ জায়গা, কুঞ্জ, বিভিন্ন ভাস্কর্য, মাটির কুটির, ডাকবাংলো, বাজার ,রাইডস, রেস্ট হাউজ,বিশ্বের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ , 'রংধনু' আর্ট গ্যালারি, 'মহা মায়া ইন্দ্রজাল' নামে জাদুর গ্যালারী এবং কেন্দ্রীয় পিকনিকের একটি কেন্দ্র আছে। তাছাড়া এখানে আরও আছে ভি,আই,পি, রেস্ট হাউস ১০টি, মধ্যম শ্রেণীর রেস্ট হাউস আছে ১৪ টি এবং অন্যান্য ০৮ টি রেষ্ট হাউস রয়ছে ।তাছাড়াও এখানে আছে কেবলকার, ঘোড়ারগাড়ী, কৃত্রিম মস্য জগত , রেষ্টুরেন্ট, কৃত্রিম মাছ ও বিভিন্ন প্রাণী। এখানে বিনোদনের জন্য আরও আছে ছোট রাইডস। এখানকার কৃত্রিম লেকের স্পিডবোটে চড়ে আপনি নিতে পারেন এক দুরন্ত অভিজ্ঞতা । এখানে আরও আছে প্রাণিজগতের, এমি, মোরাল, ডাইনোসর, কাব্যপ্রতিভা এবং অনেক অন্যান্য প্রাণীর মতো কিছু প্রাণীর কৃত্রিম ভাস্কর্য ও 'রংধনু' আর্ট গ্যালারি,. 'মহা মায়া ইন্দ্রজাল' এ, জাদু উপভোগ করতে পারেন আপনি। বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দ্বারা চিড়িয়াখানা পূর্ণ । । এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশের মোহনীয় সৌন্দর্য্য তো আছেই!
এখানে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য আরো আছে এখানকার বিশাল দিঘিতে স্পিডবোট এবং ময়ূরপঙ্খীনাও, দুই ঘোড়া চালিত টমটম, হরেক রকম সুগন্ধ এবং সৌন্দর্য ও স্বচ্ছ পানির ফোয়ারাবিশিষ্ট কয়েকটি ফুল বাগান ও বিশ্রামের জন্য আকর্ষণীয় রেষ্ট হাউস ও ডাক বাংলোসহ বিনোদনের আরো নানা উপকরণ ।
স্বপ্নপুরী কিভাবে যাবেন:
স্বপ্নপুরী যেতে হলে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে দিনাজপুর । ঢাকা হতে বাসে অথবা ট্রেনে করে দিনাজপুর আসা যায়। ঢাকার গাবতলী এবং কল্যাণপুর হতে দিনাজপুরগামী বাসগুলি ছাড়ে।দিনাজপুর যাওয়ার জন্য বাস সার্ভিসের ভিতরে আছে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস (02-8013793, 8019312), এস এ পরিবহন (9332052), হানিফ এন্টারপ্রাইজ (8013714, 8015368),কেয়া পরিবহন (9000812), শ্যামলী পরিবহন (900331) প্রভৃতি।এসব নন-এসি ও এসি বাসের ভাড়া শ্রেণী ও মানভেদে ৬৫০টাকা হতে ১৩০০ টাকা পরজুন্ত । তাছাড়া রাজধানীর উত্তরা হতে বেশকিছু বাস দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ে।
আর ঢাকার কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, এবং পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। শ্রেনীভেদে ও মানভেদে এসব ট্রেনের টিকেটের মূল্য প্রায় ৫৩৫ টাকা হতে ১,৫৯৯ টাকা পরজুন্ত।
আর দিনাজপুর যাওয়ার পর সেখান হতে বাস বা সিএনজি ভাড়া করে সহজেই আপনি স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটে যেতে পারেন ।
স্বপ্নপুরী প্রবেশ মূল্যঃ
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটের প্রবেশ মূল্য বর্তমানে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে।
বড় গাড়ী অথবা বাস – ৫০০০ টাকা করে প্রবেশ মূল্য ।
পিকআপ অথবা নছিমন – ২০০০ টাকা করে প্রবেশ মূল্য ।
মাইক্রোবাস কিংবা হায়েস গাড়ী – ১৫০০ টাকা করে প্রবেশ মূল্য ।
নোয়া কিংবা মাহিন্দ্র – ১০০০ টাকা করে প্রবেশ মূল্য ।
প্রাইভেট কার, সিএনজি অথবা জীপ – ৪০০ টাকা করে প্রবেশ মূল্য ।
অটোরিক্সা এর প্রবেশ মূল্য – ৮০০ টাকা ।
মটর বাইক এর প্রবেশ মূল্য – ২০ টাকা ।
আর পার্কিং করতে চাইলে বড় গাড়ী – ১০০ টাকা করে ও প্রাইভেট কার অথবা জীপ – ৫০ টাকা করে ।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট যোগাযোগ:
এই অপরূপ সুন্দর স্বপ্নপুরী
পিকনিক স্পটটিতে যোগাযোগের জন্য ঢাকাস্থ ঠিকানা
হোল:
হোটেল সফিনা ১৫২,
ওসমান গণি রোড (আলু
বাজার), ঢাকা।
ফোন নাম্বার - 9554630, 9562130
স্বপ্নপুরীতে
যোগাযোগের জন্য দিনাজপুরের ঠিকানা
হোল:
দিনাজপুরের হোটেল কণিকা, স্টেশন
রোড, দিনাজপুর।
ফোন নাম্বার- 0531-63711
স্বপ্নপুরী আবাসিক হোটেল ও এদের ভাড়াঃ
আপনি ইচ্ছা করলে স্বপ্নপুরীর কটেজগুলোতে থাকতে পারেন। তাছাড়া দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য রয়ছে পর্যটন মোটেলে (0531-64718) যোগাযোগ করতে পারেন। আর এই পর্যটনের হোটেলে ঢাকা থেকে বুকিং দিতে চাইলে ফোন দিতে পারেন 9899288-91নাম্বারে। আর এইসব পর্যটন মোটেলে ১৫০০টাকা হতে ২২০০ টাকার মধ্যে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারবেন। আর এর থেকে কম টাকায় থাকতে চাইলে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন দিনাজপুরের সাধারণ মানের হোটেলগুলিতে।দিনাজপুরের সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল গুলোর ভিতরে আছে হোটেল ডায়মন্ড (0531-64629), নিউ হোটেল (0531-68122), হোটেল আল রশিদ (0531-64251), হোটেল রেহানা (0531-64414), হোটেল নবীন (0531-64178), প্রভৃতি । আর এসব হোটেলে আপনি ২০০টাকা হতে ১০০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটে থাকার ব্যবস্থা:
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট এ এসে আপনি ইচ্ছা করলে দু’একদিন থাকতে পারবেন । এখানে আছে নিশিপদ্ম, নীলপরী, সন্ধ্যাতারা, রজনীগন্ধা মেঠোঘর এবং ভিআইপি কুঞ্জ নামের পাঁচটি অনেক সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর বাংলো।আর অবসর যাপনের জন্য এইসব বাংলোগুলোকে ভাড়া দেওয়া হয় থাকে।আর আরেকটি কথা যে এখানে অল্প দামেও খাবারের সুব্যবস্থা রয়ছে।