পোষা পশু পাখির যত্ন

 

পোষা পশু পাখির যত্ন

বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় প্রতিটি মানুষ নিজের শখ পুরনের জন্য নানা ধরনের পশু পাখি লালন পালন করে থাকেন। কুকুর, বিড়াল, খরগোশ এবং নানা ধরনের পাখি (যেমনঃ কবুতর, টিয়া, কোয়েল) বর্তমানে আমাদের দেশে জনপ্রিয় পোষা পশু পাখি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে যেই প্রাণীকেই আপনারা পোষা করতে চান না কেন আপনাকে তাঁর যত্ন, দেখাশোনা প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। তাহলে জেনে আসি যে কিভাবে আপনারা পোষা পশু পাখির যত্ন নেবেনঃ

 

·         প্রথমে আপনাকে প্রাণীটির ঘুমানোর জন্য একটি আরাম দায়ক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা নির্ধারণ করতে হবে। সেখানে যেন সে আরামে ঘুমাতে পারে।

·         তারপর আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে তাঁর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এর দিকে। আর এর জন্য আপনাকে পশু চিকিৎসকের কাছ থেকে নির্দেশনা নিতে হবে।

·         পোষা প্রাণীটির নিয়মিত চেক আপ করার জন্য সেই পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখুন।

·         আপনার পোষা প্রাণীটির কি কি ধরনের রোগ হতে পারে এবং সেই রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি তা জেনে রাখুন। জরুরি সময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কি কি পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা নিন।

·         আবার আপনার পোষা প্রাণীটির যদি বড় এবং ধারালো নখ থাকে তাহলে তা নিজে হক বা পশু চিকিৎসকের কাছে হক কেটে নিয়ে আসি।

·         প্রতিনিয়ত আপনার পোষা প্রাণীটির ঘুমানোর জায়গাটি জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করতে ডেটল বা স্যাভলন যুক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করি।

·         পোষা প্রাণীটিকে পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতি ২/৩ সপ্তাহ পর পর গসল করাতে হবে। আর গসল শেষে আপনার পোষা প্রাণীটির যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে জন্য ভাল ভাবে কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।

·         যেকোনো ক্ষতিকারক নিরাপদ স্থানে রাখুন যেন তা আপনার পোষা প্রাণীটির নাগালে না আসে।

·         আপনার পোষা প্রাণীটিকে আশেপাশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে বের করেন।

আমরা জনি যে সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ। আর সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে না বুঝা বা অবুঝ প্রাণীর যত্ন নেওয়া আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। সামাজিক সচেতনতা ও আন্তরিকতারই মূলত এ কাজের জন্য প্রয়োজন।

 

 

শীতে পশু পাখির যত্ন

পোষা পশু পাখির যত্ন


শীত বা গরমের অনুভূতি প্রত্যেকটি মানুষ এবং পশুপাখি পেয় থাকে। পশু চিকিৎসকের মতে, প্রত্যেকটি প্রাণীর গরম এবং ঠাণ্ডার অনুভূতি প্রকাশ ভিন্ন ধরনের হয় থাকে। আজকের এই ব্যস্ত পৃথিবীতে যখন অবহেলিত মানুষের খবর নেওয়া সম্ভব হয় না, সেখানে এই অবুঝ প্রাণীর যত্ন বা দেখাশোনা বা খবর রাখা তো আকাশ পাতাল তফাৎ বা পার্থক্য। তারপরও সুখবর হলো যে, বর্তমানে শহরাঞ্চচলের যুবক যুবক ছেলে, মেয়েদের মাঝে পোষা প্রাণীর প্রতি একটি আগ্রহ ফুটে উঠেছে। অসুস্থ প্রাণীর প্রতি এরা বেশ যত্নশীল বটে।

স্ট্রিট ডগ বা মালিকানা (রাস্তার কুকুর) নিয়ে বর্তমানে কাজ করতেছে অনেক সংগঠক। বর্তমানে গবাদিপশুর ফার্ম করতেছে চাকরির পেছনে ছোটা অনেক যুবক। তবে লক্ষ্য করা যায় যে, পর্যাপ্ত পরিমাণ লালন পালনের জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রাণীর প্রতি ভালবাসা অনেকেরই। পশুপাখির যত্ন এবং লালন পালন যেমন অন্যান্য দিনের চেয় প্রচণ্ড শীতে অনেক ব্যতিক্রম হয় থাকে, ঠিক তেমনি প্রত্যেক প্রাণীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয় থাকে। যেমন বিশেষ সংবেদনশীল প্রাণী হলো পোষা প্রাণী। পশুপাখির বিভন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ যদি তারা একেবারে দুগ্ধপোষ্য্ শিশুর মতো যত্ন না পায়। তাই প্রচণ্ড শীতে হাতে যথেষ্ট সময় এবং আন্তরিকতার সাথে আপনার পোষা পাখিটিকে রাখেন। স্বাভাবিকভাবেই নাজুক প্রকৃতির হয় খাঁচার পাখি। অতি আলো বা রোদ, বাতাস ও শীত সহ্য করতে পারে না অধিকাংশ প্রাণী। ডা. রবিউল হাসান শীতকালে পোষা প্রাণীর যত্নের ব্যাপারে বলেন, পাখির খাঁচাটি এমন স্থানে রাখতে হবে যেন সেখানে রোদ সরাসরি না পড়ে, বাতাস যেন সরাসরি এসে ধাক্কা না দেয় এবং শীতেও যেন হানা না দেয়। খাঁচা যদি বারান্দায় রাখেন তাহলে চারপাশে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের দেয়াল দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। সবসময় সতর্ক  থাকতে হবে প্রাণীটির খাবার নিয়ে। প্রচণ্ড শীতে হালকা কুসুম গরম পানি পান করাতে হবে। পানি বদলে দিতে হবে, নোংরা বা ঠাণ্ডা হওয়ার সাথে সাথে। তাছারা সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে পানির পাত্রটি। আর পোষা প্রাণীটিকে গোসল করাতে চাইলে দুপুরে হালকা গরম পানি  দিয়ে করাতে হবে।

তিনি আর বলেন, সে সকল খাবার না দেওয়া, যেসকল খাবার খাদ্যতালিকায় নেই। খাদ্যের গুণগত মান যেন ঠিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কাঁটাযুক্ত মাংসল টুকরা, মিনারেল ব্লগ খাঁচায় রেখে দিতে হবে, খনিজ উপাদানের যোগান দেওয়ার জন্য। ফলফলাদির রসের মতো খাবার যেমনঃ ধান, গম বা ভুতা, শাক, বরবটি দেওয়া জরুরি।  পাকস্থলীর অস্বস্তি হয় এবং পলকের উজ্জলতা কমে যাবে যদি বীজ মেশানো খাবার খুব বেশী পরিমাণ খায়। কমপক্ষে ২৫-৫০ শতাংশ শাক-সবজি ও ফলজাত খাবার রাখতে হবে আপনার পোষা প্রাণীটির খাদ্যতালিকায়।

 

সজনেপাতার রস কিংবা ছোট টুকরা করে সজনেডাঁটা সপ্তাহে একদিন খাওয়ালে লাভ বার্ড এর অনেক উপকার হয়। আপনার পোষা প্রাণীটির শরীরচর্চার জন্য খাঁচার মধ্য দোলনা, ঝুনঝুনি, প্লাস্টিকের বল রেখে দিন।  কেননা শরীর ও মন দুটোই ঠিক থাকবে শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করলে। পাখি কোন অসুখে পড়লে কিংবা সঙ্গীর অভাবে দ্রুত অসুস্থ হয় পড়ে বা খাওয়া দাওয়া ছেরে দেয়। আবার পাখিকে যদি ভয় লাগে তাহলেও খাবার খাওয়া ছেড়ে দেয় আবার, দ্রুত অসুস্থও হয় পরতে পারে। তাই পাখির ভয় দূর করার জন্য হাত দিয়ে খাবার দিতে হবে এবং কথা বলতে হবে পাখির সাথে। আবার আপনার পোষা প্রাণীটির গরম দেওয়ার জন্য একটি উষ্ণতা প্রদানকারি কাপড় দিয় ভালভাবে ঢেকে দিতে হবে যাতে ঠাণ্ডা না লাগে।

তিনি আর বলেন যে, পাখি খাবার খাওয়ার সময় খাবারের একদিক খায় আবার আরেকদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। এটা পাখির স্বাভাবিক নিয়ম তাই সবসময় খাচাটি পরিষ্কার করতে হবে।

পোষা পশু পাখির যত্ন


শীতকালে শরীরের ঘন লোমই কুকুর বা বিড়ালকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। তাই শীতকালে পোষা প্রাণীটিকে স্লান করানোর পর তাঁর শরীরের লোমগুলো শুকোনো শেষ না হওয়ার আগে বাসা বের করা উচিৎ না। আপনার পোষা প্রাণীটিকে কখনোই ঠাণ্ডা মেঝতে রাখবেন না। কেননা বেশী দিন এইভাবে শুয়ালে আপনার পোষা প্রাণীটির নানা ধরনের অসুখ হতে পারে। পোষা প্রাণীর জন্য বিভিন্ন আকৃতির বিছানা কিনতে পাওয়া যায়। আপনার ঘরের কোন উষ্ণ স্থনে বিছানাটি রাখুন। তবে কখনোই আপনার পোষা প্রাণীটিকে গরম বা উষ্ণতা প্রদানের জন্য রুম হিটার ব্যবহার করবেন না। কেননা এটা বিপদজনক হতে পারে।

শীতে অসুবিধা বেড়ে যায়, যেসকল কুকুরগুলর আর্থারাটিস হওয়ার প্রবণতা  রয়ছে। এজন্য আপনাকে আপনার পোষা প্রাণীটির সুরক্ষার জন্য আপনাকে চিকিৎসকের কাছে এর প্রতিরোধের উপায় শুনে সেভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। যে রুটিন আপনাকে দিবে সে অনুযায়ী আপনার পোষা প্রাণীটির যত্ন নিতে হবে।

শীতকালে রোগ আক্রমণ করার সম্ভাবনা অনেক বেশী। তাই আপনার পোষা প্রাণীটি পর্যাপ্ত বয়স্ হয় গেলে ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি। যেন আপনার পোষা প্রাণীটি সুরক্ষিত থাকে এবং তাঁর পাশপাশি যেন আপনার  পোষা প্রাণীর আঁচরে যেন রোগ না ছড়ায়। আপনার পোষা প্রাণীটিকে অবশ্যই কৃমিনাশক ঔষধ তিনমাস পরপর খওয়াতে হবে। আর প্রতিষেধক ছয় মাস পরপর নিতে হবে।

শীতকালে যেহেতু বেশী পরিমাণে রোগ হয়, তাই সবসময় সচেতন থাকতে হবে। যেমনঃ ৯৯.১০২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কুকুর এবং বিড়াল থাকবে। প্রতি মিনিটে ৬০-১৫০ নারিস্পন্দন থাকবে কুকুরের, আর বিড়ালের থাকবে ১৪০-২২০। প্রতি মিনিটে ৮-৪০ থাকতে হবে কুকুর আর বিড়ালের শ্বাসপ্রশ্বাসের হার। আপনার পোষা প্রাণীটির এই স্বাভাবিক নিয়মের পরিবর্তন ঘটলে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url